জগলুল পাশা রুশো
টানা চারদিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে তিনটি উপজেলায় আবাদ করা আমন ধান, সব্জি ও অন্যান্য ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। হেক্টরের পর হেক্টর বিস্তির্ণ এলাকা ফসল নষ্ট হওয়ায় ব্যপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
ময়মনসিংহ কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে হালুয়াঘাট উপজেলায় সাত হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। অপরদিকে ধোবাউড়ায় আমন ধানের আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই এই দুই উপজেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ফলে ওই দিন থেকেই দুই উপজেলার আবাদ করা আমন পানির নিচে রয়েছে। অথচ আগামী এক দেড় মাস পরই ধানগুলো পরিপক্ব হবার কথা ছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ধোবাউড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই উপজেলায় ৮ হাজার ৪শ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে এবং ৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমি আংশিক তলিয়েছে। হালুয়াঘাট উপজেলায় ৬ হাজার ৮শ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ৪ হাজার ৮শ হেক্টর আংশিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ফুলপুরে সম্পূর্ণ এবং আংশিক মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৬০ হেক্টর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যার পানিতে। এই হিসেবে তিন উপজেলায় ২৮ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
হালুয়াঘাটের খন্দকপাড়া গ্রামের কৃষক সবুর হোসেন জানান, টাকা ধার করে দুই একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন তিনি। ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে বন্যা হয়ে সমস্ত ধান খেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। গত চার দিন ধরে পানির নিচে আছে। সাত দিনের বেশি সময় পানির নিচে থাকলে ধান গাছ ক্ষতির মুখে পড়বে। ধান ঘরে ওঠাতে না পারলে ধারের টাকা কীভাবে ফেরত দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন এই কৃষক।
হালুয়াঘাটের ধারা ইউনিয়নের বীরগুছিনা গ্রামের কৃষক শাকিল আলম জানান, তার মতো প্রত্যেকের জমি এখন পানির নিচে। এভাবে হঠাৎ বন্যা হবে এমন ধারণা তাদের ছিল না। এ জন্য কোনও প্রস্তুতিও ছিল না। বন্যায় উপজেলাজুড়ে আমন ধান সম্পূর্ণ ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমন ধান ঘরে তুলতে না পারলে মানুষ এবং গবাদি পশু খাদ্য সংকটে পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাসরিন আক্তার বানু জানান, হঠাৎ বন্যায় তিনটি উপজেলার অধিকাংশ ফসলি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। কৃষকের রোপা আমন ও সব্জি ক্ষেতের ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সংখ্যা ও তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলমান রয়েছে। পানি কমে গেলে তালিকাটি চূড়ান্ত করা হবে এবং কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।