নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা যাবে না | লুটপাট ও চাঁদাবাজদের কঠোর হুশিয়ারী
কাগজ প্রতিবেদক, গৌরীপুর
দেশের প্রথম কারফিউ ভেঙে ২০জুলাই ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে কলতাপাড়ায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে এলোপাতাড়ি রাবার বুলেট ও ককটেল ছুঁড়ে। ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পুলিশ আত্মসমর্থন করে। পুলিশকে যখন নিরাপদে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছিল ঠিক তখনই হুট করে পুলিশ ৭.৬২এমএম বুলেট ছুঁড়ে। ঘটনাস্থলেই ১জন ও হাসপাতালে নেয়ার পথে আমাদের আরও ২জন শহিদ হন। এ সময় আহত হন আরও ২৩জন।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, চাঁদবাজি, লুটপাট, নিরাপরাধ ব্যক্তিদের নামে মামলা ও অন্তবর্তীকালীন সরকার সহ বিভিন্ন বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) গৌরীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
২০জুলাইয়ের মর্মান্তিক নির্যাতন ও হামলার বর্ণনা তুলে ধরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের সাথীরা শহিদ হয়েছেন, অথচ আরেকটি মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলবাজির খেলা শুরু করেছে। এসব মামলায় প্রকৃত দোষীদের সঙ্গে নির্দোষ ও নিরপরাধ ব্যক্তিদেরও যুক্ত করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা বেঁচে যেতে পারেন এবং নিরপরাধ ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হবেন। আমরা চাই ‘জুলাই বিপ্লব’র সঙ্গে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেহেদি হাসান দীহান, অর্পিতা কবির এ্যানি, শামসুজ্জামান দুর্জয়, আশিকুর রহমান রাজীব, মেহেদি হাসান, অনিক মজুমদার শুভ, রবিকুল ইসলাম প্রমুখ।
তারা বলেন, পুলিশ গুলি ছোড়লে বিপ্লব হাসান, নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব ও জুবায়ের আহমেদ নিহত হয়। এসময় আহত হন ২৩জন। তারা হলেন ফারুক আহমেদ নিলয়, ছোটন মিয়া, ফয়সাল আহমেদ, সোহেল রানা, মোশারফ হোসেন, মেহেদি হাসান, বিল্লাল হাসান, বুলবুল মিয়া, জুনায়েদ আব্দুল মালেক, শ্রাবণ, আমিনুল হক, বাহালুল মুনশী, আপন, রূপন, ইমন, মেহেদি হাসান, অর্পিতা কবির এনি, বিজয় চন্দ্র সরকার, বিজয় বাড়ই, হৃদয় মিয়া, মোজাম্মেল হোসেন, রিয়াদ, আশিকুর রহমান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল মামলাবাজির খেলা শুরু করেছে। এসব মামলায় দোষীদের পাশাপাশি নির্দোষ ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে। এতে করে দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি থেকে বেঁেচ যেতে পারে।
লুটপাট ও চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করে মেহেদি হাসান দীহান বলেন, ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর থেকে একটি পক্ষ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য লুটপাট ও চাঁদবাজির খেলায় মেতে উঠেছে। যারা এসব করছেন তাদের হুশিয়ার করে বলতে চাই আমরা মাঠ ছাড়ি নাই। কোন হীন চক্রান্ত বাস্তবায়ন হতে দেবো না। এছাড়াও ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর চলমান আরেকটি ইস্যু শিক্ষক পদত্যাগ। শিক্ষার্থী ভাই- বোনদের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনাদের অভিযোগ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরুন। শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ- রাজনীতিকরণ, নিয়োগ-বাণিজ্য, দুর্নীতি ও নিয়মিত পাঠদান ব্যহত হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দূরে রাখবেন।
অন্তবর্তী সরকার নিয়ে রিদওয়ানুল ইসলাম ফাহাদ বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বধীন অন্তবর্তী সরকার ্উড়ে এসে জুড়ে বসা সরকার নয়। এটি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত বিপ্লবী সরকার। দেশের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংষ্কার ও উপযুক্ত পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত ছাত-জনতা এই সরকারকে দেখতে চায়। এবং সরকারের কাজ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তত।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। পুলিশ জড়িত কিনা সেটা তদন্তে জানা যাবে। এছাড়াও ছাত্র-আন্দোলনের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে কিনা আদালত থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। নিরাপরাধ কেউ যেন হয়রানি না হয় সে বিষয়ে পুলিশ সর্তক আছে।