কাগজ প্রতিবেদক
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে করা প্রজেক্টে জোর করে অনেকের জমি লিখে নিয়েছেন আইনমন্ত্রী। কেউ জমি দিতে রাজি না হলেই ডেকে নেয়া হতো র্যাবের সদর দপ্তরে। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে গ্রামের কৃষকদের নামে দেয়া হতো মামলা। বাধ্য করা হতো কম মূল্যে জমি লিখে দিতে। প্রভাব খাটিয়ে জমি না কিনেই দখল করতেন অন্যের জমি। এমন সব অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ও আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে খাগাটিপাড়া ও নারায়নপুর মৌজায় আট একরের একটি প্রজেক্টে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নামে জমি আছে তিন একর ৭৪ শতাংশ। আর তার ভাগ্নে পরিচয়দানকারী ইকবালের নামে আছে সাড়ে চার একর। তবে দলিল না করেও দখলে রাখা হয়েছে আরো কয়েক একর জমি।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার দাপটে কম দামে জমি লিখে দিতে বাধ্য করা হতো মালিকদের। আর যারা জমি দিতে রাজি হতেন না, তাদের নামে স্থানীয় দালালদের দিয়ে দেয়া হতো একের পর এক মামলা। আনিসুল হক গ্রেফতারের পর সম্পদ গোপন করতে রাতারাতি জমির সাইনবোর্ডে আনিসুল হকের নাম কালো কালি দিয়ে মুছে দিয়ে লেখা হয়েছে ইকবাল। ত্রিশাল উপজেলা ভুমি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আনিসুল হকের নামে খারিজ হয়েছে এক একরের কিছু বেশি জমি।
মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান হোসেনের অভিযোগ, আমি জমি দিতে ইচ্ছুক ছিলাম না। পরে আমাকে র্যাব সদস্যদের দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার র্যাব অফিসে। র্যাব অফিসে নেওয়ার পর আমরা খুব ভয়ে ছিলাম তারপর আমরা বুকে সাহস নিয়ে বলেছিলাম, আমাদের জমি আমরা ছাড়বোনা। আমাদের জমির কাগজপত্র সবই ঠিক আছে। সকল কাগজপত্রও দেখিয়েছি। তারপরও আমাদেরকে র্যাব দর দপ্তরে ৬ বার নেওয়া হয়েছে। জোরপূর্বকভাবে জমি নেওয়ার জন্য আমাদেরকে চাপ দিচ্ছিল। সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হককে আমরা ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম অশিক্ষিত গ্রামের কৃষক আমাদের জমি নিয়েন না। তিনি রাগে বলেন, আমাকে সম্পূর্ণ জমি না দিলেও অর্ধেক অংশ জমি দিতে হবে। পরে ভয়ে রাজি হয়ে বলেছিলাম, বর্তমান বাজার মূল্যে দাম দিতে হবে। আমার জমির মূল্য দেড় কোটি টাকা হলেও আমাকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি লিখে নেয়।
একই এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমি আনিসুল হককে বলেছিলাম, স্যার- আমরা শুনেছি আপনার স্ত্রী-সন্তান নেই। আপনার এতো বিশাল সম্পদ কে ভোগ করবে। আমাদের ২০-২৫ জন পরিবারকে আঘাত দিয়ে এই সম্পত্তিটা না নিলে কি চলে না। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি হেরে যাওয়া মানে বাংলাদেশ হেরে যাওয়া। এই জমি আমরা লাগবে। তোমাদেরকে দিতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, পরে জোর করে সাব-রেজিস্ট্রার এলাকায় এনে, ডিসি, এসপি ও ওসিকে নিয়ে এসে জোরপূর্বক দলিল করে নেয়। আমাদেরকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে দীর্ঘ আট বছর বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
জাহানারা খাতুন নামে এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার নামে খারিজ আমার নামে দলিল আছে। তারপরও দালালের মাধ্যমে আমার জমি দলিল করে নিয়ে গেছে। আমার ছেলেমেয়েরা অশিক্ষিত কিছুই বুঝে না। জমি লিখে নেওয়ার পর আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদেরকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের নামে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে আমরা এখন নি:স্ব। আনিসুল হকের দালালের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কারাগাতে থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া জমি দখলে রাখা অভিযুক্ত ইকবাল আত্মগোপনে রয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাহফুজুল আলম মাছুম বলেন, আমরা রাজস্ব শাখায় তথ্য নিয়ে জানতে পেরেছি ত্রিশালের আমিরাবাড়ি ও মঠবাড়ি ইউনিয়নে দুইটি খতিয়ানে সাবেক এমপি আনিসুল হকের নামে ১.০৪৭৫ একর জমি রয়েছে।