জগলুল পাশা রুশো
গত ৪ অক্টোবর থেকে টানা এক সপ্তাহ পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষি জমির আমন ধান, মাছের ঘের, রাস্তা, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তিন উপজেলায় পানি প্রবেশ করে ক্ষতি মুখে পড়ে ২৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। এর মধ্যে তিন উপজেলায় ৩৫৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। যদিও এখন দূর্গা পূজা উপলক্ষে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। তবে ৯ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পূজার বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, ছুটি শেষে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করবেন। তবে এখনও পুরোপুরি পানি না কমায় ছুটি শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে আসতে পারা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। হটাৎ বন্যায় বাড়িঘর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় অভিভাবকরা।
হালুয়াঘাট উপজেলার খন্দকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সবুর মিয়া বলেন, ‘বন্যায় কৃষক যেভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ঠিক একইভাবে আমাদের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পানিতে ক্ষতি হয়েছে। টানা ৪-৫ দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ছিল। এই দুর্যোগে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মারাত্মক ব্যঘাত ঘটেছে।
ধোবাউড়া উপজেলার শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, ‘ধীরগতিতে বন্যার পানি কমছে, আর ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। বিশেষ করে একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করাটা এ মুহুর্তের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
ফুলপুরের সঞ্চুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘৬ অক্টোবর থেকে বাচ্চারা বিদ্যালয়ে না গেলেও পূজার ছুটির আগ পর্যন্ত নিয়মিত আমরা শিক্ষকরা দুর্ভোগের মধ্যেও গিয়েছি। স্কুলের বারান্দা ও মাঠের ক্ষতি হয়েছে। ছুটি শেষে সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জানানো হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান খান বলেন, হালুয়াঘাটে ১৬৫, ধোবাউড়ায় ৯০ ও ফুলপুরে ১৯ বিদ্যালয়সহ তিন উপজেলায় ২৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৬৩টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ ছিল। আগামী ২১ অক্টোবর বিদ্যালয় খোলা হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানা যাবে। তাৎক্ষণিকভাবে স্লিপের টাকায় মেরামতে কাজ শুরু করা হবে। পরে বরাদ্দ চাওয়া হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহসিনা খাতুন বলেন, ‘হালুয়াঘাটে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫৪টি, ধোবাউড়ায় ২০ এবং ফুলপুরে ৯টি সহ মোট ৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ। বন্যার পানি কমলে ক্ষতি নিরুপন করে পুরোদমে ক্লাস শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।