জহিরুল ইসলাম জুয়েল
ময়মনসিংহের ভালুকা রেঞ্জের আওতায় কাদিগড়, হবিরবাড়ি ও মল্লিকবাড়ি বিটে সুফল বনায়ন না করেই বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে রেঞ্জ অফিসার হারুন অর রশীদ খান ও বিট অফিসার আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে। রোপনকৃত চারা উপড়িয়ে ফেলার অভিযোগ এনে হয়রানী করার জন্য স্থানীয় কৃষকদের নামে ১৫দিনে ১০টিরও অধিক মামলা করেছেন বন বিভাগ। মামলা গুলো করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। এরই প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টেকসই বন ও সুফল প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভালুকা রেঞ্জের আওতায় কাদিগড়, হবিরবাড়ি ও মল্লিকবাড়ি বিটে ২০০একর বনায়নের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু হবিরবাড়ি ও কাদিগড় বিটে প্রায় ১০ একর বনায়ন করা হয়। তাছাড়া মল্লিকবাড়ি বিটের আওতায় কোনো চারাই রোপন করা হয়নি। হবিরবাড়ি মৌজার ৭৯৯ নম্বর দাগে ৮ একর জমিতে ৮ হাজার চারার বনায়নের দাবি করা হলেও দেড় একর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বনায়নের জন্য কাদিগড় বিট অফিসে উৎপাদিত চারাগুলোর বেশিরভাগই নার্সারীতে রয়েগেছে এবং কিছু চারা লাগানোর জন্য নার্সারী থেকে উত্তোলন করা হলেও তা লাগাতে না পারায় নার্সারীতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে চারা উপড়িয়ে ফেলার অভিযোগ এনে বনবিভাগ স্থানীয় কৃষকদের নামে একের পর মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভূক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন। হয়রানীমূলক মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার, বনবিভাগের অসাধূ ব্যক্তিদের চাঁদাবাজি, ঘুসবাণিজ্য বন্ধ ও ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন উর রশীদ খান ও কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খানকে প্রত্যাহার ও বিচার দাবি,এ ছাড়াও ১৯৮৩ এবং ১৯৯২ সালের চয়েজ বনের গ্যাজেট বাতিলের দাবি করে গত ২৯সেপ্টেম্বর এলাকার কয়েক হাজার নারী পুরুষ উপজেলার সিডস্টোর বাজার এলাকায় ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। পাড়াগাঁও মৌজার ২৯০ ও ২২৭ নম্বর দাগে এক্সিল্যান্ড সিরামিক ও টাইলস ফ্যাক্টরী, ৯৮৮ ও ১০৩৯ নম্বর দাগে বেস্টওয়ে গ্রুপ, ফিনিক্স গ্রুপ, হামিদ এগ্রো, রানার অটো, এনডিই ও ডেবোনিয়ার প্যাডিংসহ বেশ কয়েকটি চলমান ও প্রস্তাবিত কারখানার দখলে শতাধিক একর বনভূমি থাকলেও ওই সব ফ্যাক্টরীর ভেতর খালি জায়গাগুলোতে রহস্যজনক কারণে বনায়ন বা তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।পক্ষান্তরে নিরীহ কৃষকদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।
মো: নাছির উদ্দিন অভিযোগ করেন পাড়াগাঁও মৌজার বেশ কয়েকটি দাগে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ একর জমিতেও বনায়ন করা হয়নি। অথচ জানা গেছে, ভালুকা রেঞ্জে ১৭৭ একরের উপরে বনায়ন করা হয়েছে। আর এসব বনায়ন দেখিয়ে ভালুকা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: হারুন উর রশীদ খান ও কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন।
তাছাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন উর রশীদ খান প্রায়ই বলতেন, তার ছেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ছেলের কথা বলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীসহ নিরীহ কৃষকদেরকে নানা ভাবে ভয় দেখাতেন । তিনি কাউকে পরোয়া করেন না।
তোফায়েল ইবনে জামাল জানান, পাড়াগাঁও মৌজার ২৭২, ২৯০ ও ২২৭ নম্বরসহ বেশ কয়েকটি দাগে অল্প কিছু জমিতে বনায়ন করা হয়। বনায়নকৃত ওইসব জমি আরওআর রেকর্ডমূলে তাদের শত বছরের দখলীয় এবং দাদার আমল থেকে ভোগদখলে আছেন ও বিএস রেকর্ড পর্যন্ত আমাদের নামে হয়েছে এবং ২০২০সাল পর্যন্ত জমির খাজনাও পরিশোধ রয়েছে। ্ওইসব জমি ডিমারগেশন ছাড়াই গত ২অক্টোবর ওইসব জমিতে বনবিভাগের লোকজন কৃষকের ফসলী জমিতে চারা লাগাতে আসলে, এলাকাবাসি তাতে বাঁধা দেন। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বনবিভাগ থানায় দুইটিসহ আদালতে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ৮/১০ টি মিথ্যে মামলা করে। আরো মামলা দেয়া হবে বলে হুমকী দেয়া হচ্ছে।
কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনসাধারণের সাথে কথা বলার জন্য সরকার তাকে মোবাইল সরবরাহ করেননি, কাজেই তিনি সাধারণ মানুষের ফোন ধরেননা।
ভালুকা রেঞ্জ এলাকায় বনায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: হারুন-উর-রশীদ খান এই বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস থেকে তথ্য নেয়ার পরামর্শ দেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আ,ন,ম আবদুল ওয়াদুদ জানান, উল্লেখিত অনিয়ম ও মামলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।