জগলুল পাশা রুশো
গত এক সপ্তাহের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ায় গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদেরও ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ বাঙ্গালীদের পাশাপাশি তাদেরও জমির ফসল, পুকুরের মাছ ও বাড়িঘর হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভারতীয় সীমান্ত এলাকার এসকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সরকারের কাছে প্রণোদনা প্রদান এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
ভারত ও বাংলাদেশে হটাৎ করে অতিবর্ষণের ফলে ঢলের পানি ভোগাই, সোমেশ্বরী, নেতাই ও কংশ নদী উপচে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ফুলপুর ও ধোবাউড়াসহ শেরপুরের ঝিনাইগাতি, নালিতাবাড়ি এবং নেত্রকোণার দূর্গাপুরসহ ও কলমাকান্দা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকায় বহুকাল ধরে গারো, হাজং ও কুচ আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। অকালবন্যায় এসব এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যার একটি বড় অংশ ক্ষতির শিকার হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ।
ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তের বাংলাদেশি এ অংশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লক্ষাধিক গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হদি, বর্মণ বাস করে। সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় প্রায় ৪ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার অর্জুন চাম্বুগং জানান, এবারের বন্যার পানির উচ্চতা ৮৮ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। নেতাই নদীর পানি আকস্মিকভাবে ফুলে-ফেঁপে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে বহু জনপদ ভাসিয়ে নেয়। ধোবাউড়া উপজেলার গামারিতলা, রনসিংহপুর, ঘোষগাও ও কলসিন্দুর এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বেশ কয়েকটি মাটির ও টিনের ঘর ধসে গেছে। ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়ায় তারা এখন মানবেতর দিন পার করছে।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় ও কলসিন্দুরের বাসিন্দা মারিয়া মান্দা জানান, আদিবাসী অধ্যুষিত এসব এলাকায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় জানমালের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। নেতাই নদীর বাধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের মত নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) বানভাসী মানুষের পাশে দাড়িয়েছিল কিন্তু শুকনো খাবার, সুপেয় পানি, বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেটের ব্যপক চাহিদা থাকায় তারা ফান্ড কালেকশনে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা আনসেং দলবত।
সাম্প্রতিক ঢল ও বন্যায় অনেকের ঘর চোখের পলকে ধসে পড়ে। হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা, গোবড়াকুড়া, বাঘবেড়, কড়ইতলি এবং ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া, কলসিন্দুর, মাইজপাড়া, রণসিংহপুর, ঘোষগাও এলাকার বহু মাটির ঘর ধসে পড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এসব দরিদ্র মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে। বহু আদিবাসী পরিবার জমির ফসল, পুকুরের মাছ এবং ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অরন্য চিরান বলেন, এত বন্যা এর আগে হালুয়াঘাট – ধোবাউড়ার মানুষ কখনও দেখেনি। ধান ক্ষেতের উপর যেন অথৈ জলরাশি। সেইসাথে রাস্তা ঘাট, পুকুর ডুবেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় সকলের মাঝে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় এবং সবাই দিশেহারা হয়ে পড়ে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে এসব দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে পুনর্বাসন করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায় বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মোঃ সাইফুল্লাহ পান্না। পরিদর্শনকালে সচিব বন্যায় ভাসমান বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন ও ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেন। এসময় তিনি বলেন, বন্যা চলাকালীন দুর্গতদেরকে সহযোগিতার জন্য সরকার যেমন পাশে আছে, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও সেভাবে পাশে থাকবে এবং কাজ করে যাবে।