কাগজ প্রতিবেদক, ফুলবাড়িয়া
সংস্কারের এক বছরের মধ্যেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া-গাড়োহাট সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়লেও বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা বাধ্য হয়ে চলাচল করছেন। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। ফলে টিকসই না হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে খানাখন্দের কারণে বেশির ভাগ যানবাহনকে চলতে হচ্ছে হেলেদুলে। অনেকগুলো বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমেছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে এঁকেবেঁকে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকরা। পথচারীরাও সড়ক দিয়ে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ফুলবাড়িয়া-গাড়োহাট সড়ক ব্যবহার করে পৌর শহরে পৌঁছাতে হয় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির ১৪ কিলোমিটার সংস্কার করার পর সবাই মনে করেছিল দীর্ঘদিন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু দুই ধাপে সংস্কারের পর এক বছর না পেরুতেই খানাখন্দ হতে থাকে। ধীরে ধীরে খানাখন্দ আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে ৬ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পৌর শহরে প্রবেশের একমাত্র এই সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনের চলাচলে ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য যথাসময়ে হাসপাতালেও নেওয়া যাচ্ছে না। যানবাহনের যাত্রী ও চালকদেরও ভোগান্তির শেষ নেই।
স্থানীয় আফজাল বলেন, এই সড়ক দিয়ে ট্রাক ও তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনসহ মোটরসাইকেল চলাচল করে। উপজেলা শহরে প্রবেশের একমাত্র এই সড়কটি সংস্কারের পর একবছরও ভালো থাকেনি। ধীরে ধীরে সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ইট, সুরকি, পাথর ও বিটুমিন উঠে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কার করায় সড়কটি একেবারেই বেহাল হয়ে যাচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বপন নামের আরেকজন বলেন, ইচ্ছেমতো কাজ করে প্রকল্পের টাকা নিয়ে চলে গেছে ঠিকাদার। এখন আমাদেরকে নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়ছে হচ্ছে।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক নুরুল হক বলেন, খানাখন্দের কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। নাট-বোল্ট খুলে পড়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সম্প্রতি রাতে যাত্রী নিয়ে পৌর শহরের দিকে যাচ্ছিলাম। সড়কের মাঝখানে বড় একটি গর্তে পানি জমে ছিল। তখন হঠাৎ করে চাকা গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে যায়। এতে কয়েকজন যাত্রী আহত হয়। সড়কটি দ্রুত ভালোভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন।
সড়কে খানাখন্দের কারণে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে উল্লেখ করে অটোরিকশার যাত্রী নাসরীন সুলতানা বলেন, খানাখন্দের কারণে প্রত্যেকটি গাড়ি ধীর গতিতে চলাচল করে। এতে তেল বেশি পুড়ে খরচ বাড়ছে এমন কথা বলে চলাকরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। চালকদের কথায় যুক্তি থাকায় বেশি ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফুলবাড়িয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ফুলবাড়িয়া-গাড়োহাট সড়কের ৭ কিলোমিটারের একটু বেশি সংস্কার করার কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লাল মাহমুদ। এজন্য ব্যয় দেখানো হয় ২ কোটি টাকা। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফুল ইসলাম কামাল। এজন্য ব্যয় দেখানো হয় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক লাল মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম কামালের মোবাইল নম্বরে একাধিক কল করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফুলবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমি পাঁচমাস আগে উপজেলা কার্যালয়ে যোগদান করেছি। সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়ম হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে সড়কটিতে দিন দিন খানাখন্দ বাড়ায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। নতুন করে সংস্কার করার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।