জগলুল পাশা রুশো
ময়মনসিংহে প্রাকৃতিক নিদর্শন, ঐতিহ্যবাহী ও প্রত্নতাত্বিক স্থাপনা, বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে স্মৃতিকেন্দ্র প্রভৃতি নিদর্শন থাকলেও এসব ঘিড়ে গড়ে ওঠেনি কোন পর্যটন বান্ধব শিল্প। সম্ভাবনা থাকা সত্বেও স্থবির হয়ে আছে জেলার পর্যটন ব্যবস্থা। এই শিল্পকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনমান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটত বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এই জেলায় বেশ কয়েকটি জমিদারবাড়ি, প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন, নদী, পাহাড়, চীনা মাটির পাহাড়, শালবন, বিখ্যাত ব্যাক্তিদের নামে স্মৃতিকেন্দ্র, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাদুঘর, জাতীয় উদ্যান প্রভৃতি ভ্রমণপিয়াসীদের আকৃষ্ট করলেও দূরদর্শী উদ্যোগের অভাবে পর্যটন খাত অগ্রসর হচ্ছেনা। বরঞ্চ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা যেগুলো আছে সেগুলো দিন দিন ধ্বংসের পথে। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলো মুখ থুুবড়ে পড়ে আছে অযত্ন, অবহেলায়।
এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পালাগান, জারিগান, যাত্রা, লাঠি খেলা, গারো আদিবাসীদের জীবন সংস্কৃতি এবং ওয়ানগালা উৎসব প্রভৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। পর্যটনব্যবস্থা সচল থাকলে এসবও টিকে থাকতে পারতো। এছাড়া পরিবহন, আবাসন, হোটেল রেস্তোরা, বিপনীবিতান প্রভৃতি ব্যবসা আরও চাঙ্গা হতো এবং বেকারত্ব দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতো বলে মনে করেন সাংস্কৃতিক বাক্তিত্ব কবি ইয়াজদানী কোরায়শী।
শহরের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মাঝে শশীলজ, লোহার কুটির, গৌরিপুর লজ, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, ময়মনসিংহ জাদুঘর অন্যতম। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, বধ্যভূমি, স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ, শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান, ময়মনসিংহ জলকল, ব্রহ্মপুত্র নদ সহ প্রভৃতি স্থান রয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে মুক্তাগাছায় জমিদারবাড়ি, জোড়া মন্দির, গৌরিপুরের রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি, সখিনা বিবির সমাধিস্থল, হালুয়াঘাটের গারো পাহাড়, গাবরাখালি ইকোপার্ক, ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যান, কুমির প্রজনন কেন্দ্র, ফুলবাড়িয়ার শালবন ও বড়বিলা বিল, ধোবাউড়ার চীনা মাটির পাহাড় ও গারো পল্লী উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর এবং একমাত্র মৎস জাদুঘর। এই জাদুঘর দুটিতে দেশের বাঙ্গালি সংস্কৃতির ও প্রাচীন জীবনব্যবস্থার অনেক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জার্মপ্লাজম সেন্টারে দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ভিদও সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এছাড়া ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মরণে গফরগাঁও উপজেলায় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মরনে ত্রিশালে স্মৃতিকেন্দ্র ও পাঠাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে। ময়মনসিংহ শহরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের চিত্রকর্ম ও তার ব্যবহৃত উপকরণসহ স্থাপিত হয়েছে জয়নুল সংগ্রহশালা। এগুলোতে সারাবছরই কমবেশী অনেক দর্শনার্থী আসাযাওয়া করেন কিন্তু উক্ত স্মৃতিকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া ও প্রচারণার অভাবে খুব বেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছেনা।
জেলা শহরে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল থাকলেও ভাল মানের হোটেল মাত্র দু তিনটি। এগুলোতে আবাসন সঙ্কটও রয়েছে। সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত কোন পর্যটন মোটেল গড়ে না ওঠায় পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থার কোন অগ্রগতি হয়নি। অথচ ভাল ও উন্নতমানের আবাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠলে বিদেশী পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করা সম্ভব হতো।
পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে র্ব্যান্ডিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন উদ্দিন বলেন, পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনার প্রচার এবং প্রসারে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ##
ছবি-০৩
মমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দুই জনের মৃত্যু
কাগজ প্রতিবেদক
গত ২৪ ঘন্টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে এবং সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার আমতৈল গ্রামের মো. মোস্তফা (৬৫) ও গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকার নাসিমা খাতুন (৩৫)।
গতকাল সোমবার ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন মহিউদ্দিন খান জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর দুইটার দিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোস্তফা। রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে তিনি মারা যান। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভর্তি হয়েছিলেন নাসিমা। তিনি সোমবার সকাল ৯টার দিকে মারা যান। তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ২০জন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মোট ৩৯ জন ভর্তি আছে। তাদেরকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে থাকে। তবে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চালু করা হয়েছে ৬০ শয্যার আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা প্রস্তুত রয়েছে। ##