কাগজ প্রতিবেদক
টানা ২৪ ঘন্টা ধরে মুষলধারে ভারী বর্ষনের ফলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কৃষকের সদ্য রোপনকৃত আমন ফসল। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। পাহাড়ী ঢলের প্রবল স্রোতে নেতাই নদীর বেঁড়ীবাধ ভেঙ্গে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে।রয়েছে বড় বন্যার আশংকা। হু হু করে বাড়ছে পানি। এতে আতংকে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার বিকাল ৪ টায় কিছুটা কমে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। টানা বর্ষনে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোঁষগাও, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসছে পানি। এতে প্রতিঘন্টায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পানির পরিমান। ইতোমধে নিম্ন অঞ্চলগুলোতে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর এবং মাটির রাস্তা। ধোবাউড়া ঘোষগাও এবং কলসিন্দুর পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে। রাতে বাড়িতে পানি উটলে লোকজন রাস্তায় এসে রাত কাটিয়েছেন। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে সদ্য রোপনকৃত আমন ফসল।
ঘোঁষগাও ইউনিয়নের আবুল বাশার শিমুল জানান, নেতাই নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে নদীর আশেপাশের বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে, তাদের বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে, অনেকে কষ্ট করছে। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির জানান, নেতাই নদীর বাধ ভেঙ্গে মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ডুকছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল জানান, ভারী বর্ষণের ফলে নেতাই নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে আগামী দুনিনের মধ্যে এলাকার পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি পুনঃনির্মান করা হবে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান, যেসব এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে গত দুদিনের অবিরাম প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে হালুয়াঘাটের ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটিই প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় ত্রিশ হাজার পরিবার। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারনে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে তারা। মানুষের এতো দুর্ভোগেও নেই কোন ত্রাণ তৎপরতা।
দুর্ভোগের শিকার কৃষক সেলিম জানায়, তার বাড়ির সবকিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে সেন্টএন্ড্রুজ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়ণ কেন্দ্রে থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা না পেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। বন্যা কবলিত মানুষেরা সেখানে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জোর দাবী জানায়।
শনিবার সকালে উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হালুয়াঘাট পৌর শহরের মিশন স্কুল রোড়, হালুয়াঘাট-নালিতাবাড়ি সড়কের পাগলপাড়া গ্রাম, জয়িতা মহিলা মার্কেট, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাদ্য গুদাম ও থানাসহ বিভিন্ন যায়গা তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও গাজিরভিট ইউনিয়নের গুমুরিয়া ও বোরাঘাট নদীর তীর ভেঙ্গে গিয়ে আশপাশ এলাকার ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট পৌর প্রশাসক ও সহকারি কমিশনার (ভুমি) মিজ জান্নাত বলেন, ইতিমধ্যে পৌরসভার পক্ষ থেকে কয়েকটি আশ্রয়ন কেন্দ্রে খাদ্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাল উদ্দিন জানান, ত্রান হিসেবে ৫০০ জনের মধ্যে শুকনো খাবার ১০ টন চাল ও ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। ##