কাগজ প্রতিবেদক, গৌরীপুর
সহোদর ভাইকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের গঠিত নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে ৪০লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার দুই সহোদর ভাই আর একই সঙ্গে পিতা-পুত্রের চাকুরী করায় এ বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষকের ‘পরিবার উচ্চ বিদ্যালয়’ হিসাবে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নিয়ম বর্হি:ভূত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফি আদায়সহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএনও মো. শাকিল আহমেদ। তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ বোর্ডে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবীর সহোদর ভাই ও কমিটির সিদ্ধান্ত অন্য বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আরশাদুল হক। তিনি আরও জানান, নিয়োগপ্রাপ্ত কম্পিউটার ল্যাব অপারেটরের চাকুরী এমপিও জন্য প্রেরণ করা হয়েছিলো দু’বার বাতিল হয়েছে। যোগ্যতার ত্রুটি থাকলে তার নিয়োগ বাতিল করা হবে। নিয়োগবোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় ৪০লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি ভিত্তিহীন। কেউ বললে তো আর মুখে ধরে রাখা যাবে না, তবে এ অভিযোগ সত্য নয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে দু’টি অখ্যাত পত্রিকায় গোপন বিজ্ঞাপন দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আরশাদুল হক। পরবর্তীতে অফিস সহায়ক নিয়োগ দিতেও অনুরূপ গোপনীয় রক্ষা করেন বিজ্ঞাপন দেন। এ দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোনো নোটিশও বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়নি। নিয়োগবিধি লংঘন করে অতিশয় গোপনে গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সহোদর ভাইকে নিয়ে গঠিত হয় নিয়োগ বোর্ড। নির্ধারিত প্রার্থীর পাস করাতে তাদের অনুকূল্যে শুধুমাত্র প্রক্সি প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ৭জন আবেদন করলেও নিয়োগ পরীক্ষায় মাত্র ৩জন উপস্থিত হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩জন, অফিস সহায়ক পদে ৩জন, আয়াপদে ৪জন আবেদন করলেও ৩জন অংশ নেয়। জনশ্রুতি রয়েছে ৪টি পদে প্রায় ৪০লাখ টাকার উৎকোচ নিয়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক শাহ আরশাদুল হক।
অপরদিকে এ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে তার দুই সহোদর ভাই সহকারী শিক্ষক মো, ফজলুল হক, মো. হুমায়ুন কবীর, প্রধান শিক্ষকের নিকটত্মীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. শহীদ উল্লাহ, তার পুত্র সোহাগ মিয়া অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। ফলে একই সঙ্গে ভাই ও পিতা-পুত্রের চাকুরী করায় পাছার উচ্চ বিদ্যালয়টি ‘পরিবার উচ্চ বিদ্যালয়’। এছাড়াও বিদ্যালয়ে বিগত বছরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম ইসলাম সিয়াম, সানিমুল ইসলাম, রেদোয়ান আহমেদ জনি ও মাসুদ মিয়া জানায়, প্রত্যেকের নিকট থেকে উন্নয়ন ফিস ৫শ টাকা, সেশন চার্জ ৫শ টাকা, বেতন ৬শ টাকা, পরীক্ষার ফিস ৪শ টাকা ও আইসিটি বিভাগের চার্জ ৫শ টাকা মোট ২হাজার ৫শ টাকা করে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আদায় করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানকে নিয়ে বিদ্যালয়টিতে লুটপাট হয়েছে। তবে এসব সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন প্রধান শিক্ষক শাহ আরশাদুল হক।
বিদ্যালয়ের অবৈধ নিয়োগ, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি, বিধিবর্হি:ভূত নিয়োগ বাতিল ও অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপিতে বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর পক্ষে এ অভিযোগ দায়ের করেন মো. রোকন মিয়া, মাসুদ রানা, জাহাঙ্গীর আল, মো. আজিজুল হক, মো. আতিক, মাজহারুল হক, কামাল হোসেন, মো. টিটু, রফিকুল ইসলাম, গোলাপ মিয়া ও মো. রুহুল আমিন।